মাহবুব মোর্শেদ
চীন দেশটা মিস্টিক; রহস্যাবৃত। কবির হুমায়ূনের চীন বিষয়ক বই ‘৩৯ পূর্ব হোয়া হুথং’ পড়তে পড়তে ভাবছিলাম চীনরহস্যের কারণ। সম্ভবত, দীর্ঘদিনের কমিউনিস্ট শাসনের আবর্তে থাকা দেশটি নিয়ে ভায়া ওয়েস্টার্ন মিডিয়া আমরা যে ধারণা পেয়েছি তাই চীনকে মিস্টিফাই করে তুলেছে। কমিউনিস্ট শাসনে থাকা চীনে যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই, সেখানে ভিন্নমতাবলম্বীদের যখন তখন ধরে ধরে কারাবন্দি করে ফেলা হচ্ছে, কেউ কেউ পালিয়ে চীন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন, মিডিয়া-সমক্ষে ফাঁস করে দিচ্ছেন চীনের জারিজুরি এই আমাদের মোটামুটি ধারণা। থিয়ান আর মেন স্কোয়ারের ঘটনা আমরা কিছু জানি, কিছু অনুমান করি। আরও জানি যে, তিব্বতে অস্ত্রের মুখে দুঃশাসন চালাচ্ছে চীনারা। দালাই লামা সহ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বের করে দিয়েছে। নিজেদের মতো করে এখন গড়ে তুলছে রহস্য প্রদেশ তিব্বত। ওয়েস্টার্ন মিডিয়ার সূত্রে অবশ্য এও আমরা শুনেছি যে, চীন হলো আগামী পৃথিবীর অন্যতম অর্থনৈতিক ও সামরিক পরাশক্তি। এশিয়ার ভারত ও চীন নাকি আগামী পৃথিবীর নেতৃত্ব দেবে। অকল্পনীয় গ্রোথ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক অগ্রগতি, আর উদারনীতির ফলে গড়ে ওঠা শিল্প চীনকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে। চীনের দখলে এখন বিশ্ববাজার। চাইনিজ মাল অন্যদের মতো আমাদের বাজারকেও আকীর্ণ করে ফেলেছে। আর চীনের এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে পুরো পৃথিবীর ভাগ্যান্বেষীদের লক্ষ্য এখন চীন। সমানে তারা চীনা ভাষা শিখছে, চীনে শেকড় গাঁড়ার চেষ্টায় আছে।
বর্তমানের এই চৈনিক অভিজ্ঞানের বাইরেও চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। হিউয়েন সাঙ এদেশে এসেছেন মুসাফির হিসেবে। আমাদের দেশ থেকে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান চীনে গিয়েছেন ধর্মসংস্কার করতে। তারও আগে বৌদ্ধধর্মের প্রসার ঘটেছে চীনে। তাতে যে আমাদের দেশের লোকেরা অংশ নেয়নি তা নয়। চীন থেকে আমাদের দেশে এসেছে মাওবাদ। এককালে মাও সে তুংয়ের রেডবুক বাংলার তরুণদের মনে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। ‘চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’ দেয়াল লিখনে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বাংলা। সে যুগ এখন পুরনো। আগে পাড়ায় পাড়ায় সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত হতো চাইনিজ কুড়াল। চাইনিজ কুড়াল ও মাওবাদের ব্যবহার ফিকে হয়ে গেলেও পাড়ায় পাড়ায় চাইনিজ রেস্তোরাঁর এখনও বাড়বাড়ন্ত। কীভাবে চীনা খাবার এদেশে এত জনপ্রিয় হলো তা নিশ্চয় গবেষণার বিষয় আর সে খাবারে কী পরিবর্তন ইতিমধ্যে হলো তাও বিচার করে দেখা যেতে পারে।
চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের নানামাত্রা সত্ত্বেও চীন এখনও অচেনা। এত কাছে থেকেও কেন এত অচেনা হয়ে রইলো চীন, সে এক প্রশ্ন বটে। আমার মতে, চীন সম্পর্কে তথ্যবহুল বাংলা বইপত্রের অভাবই এর বড় কারণ। তবে বইপত্র লেখার জন্য লেখকদের যেতে হবে চীনে। ব্যবসায়ীরা চীনে যান, রাজনীতিকরা যান, লেখকরা যান না। কেন যান না সে আরেক রহস্য। আর গেলেও কেন লেখেন না সেও একটা জটিল প্রশ্ন। কবি কবির হুমায়ূন চীনে গিয়ে আমাদের নগদ কিছু লাভ হলো। রহস্যের কিছু কিনারও হলো। চীন নিয়ে কবির হুমায়ূনের বই ‘৩৯ পূর্ব হোয়া হুথং’।
বইটির প্রথম সাফল্য হলো, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেল চীনরা আমাদের মতোই এশিয়ান। প্রেম বিয়ে বন্ধুত্ব বিষয়ে আমাদের সমান্তরাল মূল্যবোধ চীনারাও ধারণ করে। চীনারা বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে এর মধ্যে একটি সেন্ট্রাল একাডেমি অব ড্রামা। এই একাডেমিতেই ফিল্ম নিয়ে পড়তে গিয়েছিলেন কবির হুমায়ূন। সাকুল্যে ৫ বছর কাটিয়েছেন একাডেমিতে। এই একাডেমির ঠিকানা ৩৯ পূর্ব হোয়া হুথং। বইটি বলতে গেলে, এই একাডেমির বাইরে প্রায় যায়ইনি। একাডেমির বিভিন্ন সহপাঠিনীর সঙ্গে লেখকের বন্ধুত্বসূত্রে ক্যাম্পাসের বাইরে গেলেও চীনের বৃহত্তর চিত্রটা শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেল না। একাডেমির নিয়ম-নীতি, শিক্ষাপদ্ধতি, চীনের সাম্প্রতিক নাটক-সিনেমা বিষয়েও কি খুব বেশি জানা গেল? না। ফিল্ম নিয়ে পড়েছেন কবির হুমায়ূন, চীনের ফিল্ম হিস্ট্রিটা তার পড়ার সূত্রে যদি আমাদের জানা হয়ে যেত তবে একটা বড় লাভ হতো। কবিতা নিয়ে ছোট্ট একটা অভিযানের বর্ণনা আছে। কিন্তু চীনের কবিতার কোনো ছবি তাতে স্পষ্ট হলো না।
তবে ড্রামা একাডেমির শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক, বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি চীনাদের দৃষ্টিভঙ্গি, ডরমেটরির জীবন, পানাহার, আড্ডা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত জানা গেল। সবচেয়ে বেশি জানা গেল, একাডেমির মেয়েদের বিষয়ে।
মোটামুটিভাবে চীন বিষয়ে কবির হুমায়ূনের বইটি আত্মকেন্দ্রিক। সেখানে নায়ক তিনিই। তাকে চেনার জন্য বইটি যথেষ্ট সহায়ক হতে পারে। তবে, কবির হুমায়ূনও সেখানে অর্ধেক। চীনা অংশটাই বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি যে বাংলাদেশ থেকে গেছেন। একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে ৫ বছরে বাংলাদেশের বিশেষ কোনো ঘটনাপ্রবাহ, তার ব্যক্তিগত জীবনের ব্যাকগ্রাউন্ড তাকে আলোড়িত করেনি বলেই মনে হবে বইটি পড়ে।
তবু চীন বিষয়ে না জানা অনেক কথাই বইটিতে আছে। কবির হুমায়ূনের দেখার মধ্যে সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। কিন্তু যে বর্ণনা তিনি দিয়েছেন তা অন্তরঙ্গ। ভবিষ্যতে চীন সম্পর্কে অনেক কথা নিজেদের প্রয়োজনেই জানতে হবে আমাদের। সে পথে এ বইটি মাইলফলক হিসেবে গণ্য হবে।
বইটি সুসম্পাদিত ও নির্ভুলভাবে ছাপা হলে আরও ভাল হতো। ভবিষ্যত সংস্করণে সেদিকে লেখক ও প্রকাশকের দৃষ্টি থাকবে বলে আমাদের আশা।
‘৩৬ পূর্ব হোয়া হুথং’ প্রকাশ করেছে ভাষাচিত্র। বইটি আজিজ মার্কেটে পাওয়া যায়। বইয়ের দোকানে ই-বুক আকারেও এটি এভেইলএবল।
চীন দেশটা মিস্টিক; রহস্যাবৃত। কবির হুমায়ূনের চীন বিষয়ক বই ‘৩৯ পূর্ব হোয়া হুথং’ পড়তে পড়তে ভাবছিলাম চীনরহস্যের কারণ। সম্ভবত, দীর্ঘদিনের কমিউনিস্ট শাসনের আবর্তে থাকা দেশটি নিয়ে ভায়া ওয়েস্টার্ন মিডিয়া আমরা যে ধারণা পেয়েছি তাই চীনকে মিস্টিফাই করে তুলেছে। কমিউনিস্ট শাসনে থাকা চীনে যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই, সেখানে ভিন্নমতাবলম্বীদের যখন তখন ধরে ধরে কারাবন্দি করে ফেলা হচ্ছে, কেউ কেউ পালিয়ে চীন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন, মিডিয়া-সমক্ষে ফাঁস করে দিচ্ছেন চীনের জারিজুরি এই আমাদের মোটামুটি ধারণা। থিয়ান আর মেন স্কোয়ারের ঘটনা আমরা কিছু জানি, কিছু অনুমান করি। আরও জানি যে, তিব্বতে অস্ত্রের মুখে দুঃশাসন চালাচ্ছে চীনারা। দালাই লামা সহ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বের করে দিয়েছে। নিজেদের মতো করে এখন গড়ে তুলছে রহস্য প্রদেশ তিব্বত। ওয়েস্টার্ন মিডিয়ার সূত্রে অবশ্য এও আমরা শুনেছি যে, চীন হলো আগামী পৃথিবীর অন্যতম অর্থনৈতিক ও সামরিক পরাশক্তি। এশিয়ার ভারত ও চীন নাকি আগামী পৃথিবীর নেতৃত্ব দেবে। অকল্পনীয় গ্রোথ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক অগ্রগতি, আর উদারনীতির ফলে গড়ে ওঠা শিল্প চীনকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে। চীনের দখলে এখন বিশ্ববাজার। চাইনিজ মাল অন্যদের মতো আমাদের বাজারকেও আকীর্ণ করে ফেলেছে। আর চীনের এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে পুরো পৃথিবীর ভাগ্যান্বেষীদের লক্ষ্য এখন চীন। সমানে তারা চীনা ভাষা শিখছে, চীনে শেকড় গাঁড়ার চেষ্টায় আছে।
বর্তমানের এই চৈনিক অভিজ্ঞানের বাইরেও চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। হিউয়েন সাঙ এদেশে এসেছেন মুসাফির হিসেবে। আমাদের দেশ থেকে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান চীনে গিয়েছেন ধর্মসংস্কার করতে। তারও আগে বৌদ্ধধর্মের প্রসার ঘটেছে চীনে। তাতে যে আমাদের দেশের লোকেরা অংশ নেয়নি তা নয়। চীন থেকে আমাদের দেশে এসেছে মাওবাদ। এককালে মাও সে তুংয়ের রেডবুক বাংলার তরুণদের মনে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। ‘চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’ দেয়াল লিখনে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বাংলা। সে যুগ এখন পুরনো। আগে পাড়ায় পাড়ায় সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত হতো চাইনিজ কুড়াল। চাইনিজ কুড়াল ও মাওবাদের ব্যবহার ফিকে হয়ে গেলেও পাড়ায় পাড়ায় চাইনিজ রেস্তোরাঁর এখনও বাড়বাড়ন্ত। কীভাবে চীনা খাবার এদেশে এত জনপ্রিয় হলো তা নিশ্চয় গবেষণার বিষয় আর সে খাবারে কী পরিবর্তন ইতিমধ্যে হলো তাও বিচার করে দেখা যেতে পারে।
চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের নানামাত্রা সত্ত্বেও চীন এখনও অচেনা। এত কাছে থেকেও কেন এত অচেনা হয়ে রইলো চীন, সে এক প্রশ্ন বটে। আমার মতে, চীন সম্পর্কে তথ্যবহুল বাংলা বইপত্রের অভাবই এর বড় কারণ। তবে বইপত্র লেখার জন্য লেখকদের যেতে হবে চীনে। ব্যবসায়ীরা চীনে যান, রাজনীতিকরা যান, লেখকরা যান না। কেন যান না সে আরেক রহস্য। আর গেলেও কেন লেখেন না সেও একটা জটিল প্রশ্ন। কবি কবির হুমায়ূন চীনে গিয়ে আমাদের নগদ কিছু লাভ হলো। রহস্যের কিছু কিনারও হলো। চীন নিয়ে কবির হুমায়ূনের বই ‘৩৯ পূর্ব হোয়া হুথং’।
বইটির প্রথম সাফল্য হলো, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেল চীনরা আমাদের মতোই এশিয়ান। প্রেম বিয়ে বন্ধুত্ব বিষয়ে আমাদের সমান্তরাল মূল্যবোধ চীনারাও ধারণ করে। চীনারা বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে এর মধ্যে একটি সেন্ট্রাল একাডেমি অব ড্রামা। এই একাডেমিতেই ফিল্ম নিয়ে পড়তে গিয়েছিলেন কবির হুমায়ূন। সাকুল্যে ৫ বছর কাটিয়েছেন একাডেমিতে। এই একাডেমির ঠিকানা ৩৯ পূর্ব হোয়া হুথং। বইটি বলতে গেলে, এই একাডেমির বাইরে প্রায় যায়ইনি। একাডেমির বিভিন্ন সহপাঠিনীর সঙ্গে লেখকের বন্ধুত্বসূত্রে ক্যাম্পাসের বাইরে গেলেও চীনের বৃহত্তর চিত্রটা শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেল না। একাডেমির নিয়ম-নীতি, শিক্ষাপদ্ধতি, চীনের সাম্প্রতিক নাটক-সিনেমা বিষয়েও কি খুব বেশি জানা গেল? না। ফিল্ম নিয়ে পড়েছেন কবির হুমায়ূন, চীনের ফিল্ম হিস্ট্রিটা তার পড়ার সূত্রে যদি আমাদের জানা হয়ে যেত তবে একটা বড় লাভ হতো। কবিতা নিয়ে ছোট্ট একটা অভিযানের বর্ণনা আছে। কিন্তু চীনের কবিতার কোনো ছবি তাতে স্পষ্ট হলো না।
তবে ড্রামা একাডেমির শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক, বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি চীনাদের দৃষ্টিভঙ্গি, ডরমেটরির জীবন, পানাহার, আড্ডা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত জানা গেল। সবচেয়ে বেশি জানা গেল, একাডেমির মেয়েদের বিষয়ে।
মোটামুটিভাবে চীন বিষয়ে কবির হুমায়ূনের বইটি আত্মকেন্দ্রিক। সেখানে নায়ক তিনিই। তাকে চেনার জন্য বইটি যথেষ্ট সহায়ক হতে পারে। তবে, কবির হুমায়ূনও সেখানে অর্ধেক। চীনা অংশটাই বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি যে বাংলাদেশ থেকে গেছেন। একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে ৫ বছরে বাংলাদেশের বিশেষ কোনো ঘটনাপ্রবাহ, তার ব্যক্তিগত জীবনের ব্যাকগ্রাউন্ড তাকে আলোড়িত করেনি বলেই মনে হবে বইটি পড়ে।
তবু চীন বিষয়ে না জানা অনেক কথাই বইটিতে আছে। কবির হুমায়ূনের দেখার মধ্যে সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। কিন্তু যে বর্ণনা তিনি দিয়েছেন তা অন্তরঙ্গ। ভবিষ্যতে চীন সম্পর্কে অনেক কথা নিজেদের প্রয়োজনেই জানতে হবে আমাদের। সে পথে এ বইটি মাইলফলক হিসেবে গণ্য হবে।
বইটি সুসম্পাদিত ও নির্ভুলভাবে ছাপা হলে আরও ভাল হতো। ভবিষ্যত সংস্করণে সেদিকে লেখক ও প্রকাশকের দৃষ্টি থাকবে বলে আমাদের আশা।
‘৩৬ পূর্ব হোয়া হুথং’ প্রকাশ করেছে ভাষাচিত্র। বইটি আজিজ মার্কেটে পাওয়া যায়। বইয়ের দোকানে ই-বুক আকারেও এটি এভেইলএবল।